শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন
বিশেষ শ্রেণির কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) নিরাপত্তার আওতায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মী নিয়োগের আগে প্রার্থীদের ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’-এর দীর্ঘদিনের চর্চায় ব্যত্যয় ঘটিয়ে গত দুই দফায় বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়েছে। চাকরি শুরু করার কয়েক মাসের মাথায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়ায় সম্প্রতি এক কর্মীর নিয়োগ বাতিলও করা হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে সহকারী পরিচালক পদে ১৮৩ কর্মী নিয়োগের বেলায় প্রথমবারের মতো পুলিশ ভেরিফিকেশন পরে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৯ মার্চ ২৫০ অফিসার (জেনারেল) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়নি। এর আগে একই প্রক্রিয়ায় ২২৩ ক্যাশ অফিসারও নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মী নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য অনেক সময় লেগে যেত। সময় বাঁচানোর জন্য আমরা এ পদ্ধতি নিয়েছি। পর্ষদের অনুমোদন নিয়েই এভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’ তাছাড়া নিয়োগের পরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা-বিরোধী কোনো কিছু পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর নিয়োগ বাতিলের পাশাপাশি পরিশোধিত বেতনও ফেরত নেওয়া হবে মর্মে তিনশ’ টাকার একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখা হয় বলেও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্বাহী পরিচালক।
জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে নিয়োগ পাওয়া এক ক্যাশ অফিসারের বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়ায় ওই কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করা হয় গত ২৭ মার্চ। এর পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে নানা ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কর্মীদের একটি অংশ অনেক আগে থেকেই পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া নিয়োগের বিষয়ে সমালোচনা করে আসছিলেন। তারা বলছেন, নিয়োগের পর বাদ দেওয়া হলেও ওই কর্মীর সাময়িক সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অনেক গোপনীয় তথ্য জেনে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের নিয়োগের পথ বেছে নিয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এক আত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন পরে করার এ প্রথা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সহকারী পরিচালক পদে ২০১৮ সালের ব্যাচে নিয়োগ পান ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তার ভাতিজা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকে কয়েক বছর ধরে নিয়মিতভাবে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। বর্তমানে প্রধান কার্যালয়সহ ১০টি বিভাগীয় অফিসে ছয় হাজারের মতো কর্মী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মী বা জনবলের সেই অর্থে কোনো সংকট নেই। তার পরও দ্রুত কর্মী নিয়োগের জন্য তড়িঘড়ি করে পুলিশ ভেরিফিকেশন পরে করার এই উদ্যোগকে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার স্বার্থের পরিপন্থি বলে মনে করছেন সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তা।
কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩-এর ৫নং ধারার ৩.৩ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশেষ শ্রেণির কেপিআইয়ের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত সকল সংস্থার সদস্যদের নিয়োগের পূর্বে রেডবুকের বিধি অনুসারে এনএসআই, ডিজিএফআই ও এসবি দ্বারা নিরাপত্তা প্রতিপাদন (ভেরিফিকেশন) এবং বিশেষ শ্রেণির কেপিআইতে নিয়োজিতকালীন ছয় মাস অন্তর নিরাপত্তা ভেটিং করাতে হবে।’